জনপ্রিয় ধর্মীয় বয়ানের জনবান্ধবতা সমস্যা
সমসাময়িক সময়ের ধর্মীয় বক্তাদের বক্তব্যের প্রভাব ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ
অর্থ বুঝে বুঝে মূল আরবিতে কুরআন তিলাওয়াত শুনলে অপার্থিব কিছু একটা শুনছি বলে মনে হয়। কথাগুলো মনের মধ্যে নাড়া দেয়। নিজের জীবনের সাথে তা মিলিয়ে দেখার আগ্রহ জাগে। নিজেকে সংশোধিত করতে মন চায়।
হাদিস গ্রন্থসমূহে সংকলিত অনেক বর্ণনার ক্ষেত্রেও একথা খাটে। কুরআনের মতো ওই মাত্রায় আন্দোলিত না করলেও সরাসরি ঐশী প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তির কথা ও কাজ যে সেখানে বর্ণিত হয়েছে তা বেশ বোঝা যায়।
কিন্তু আজকালকার ‘জনপ্রিয়’ ধর্মীয় বক্তাদের বক্তব্য যখন শুনি তখন ওই অনুভূতিটা কেন জানি একেবারেই আসে না। একাধিক ব্যাখ্যার সুযোগ আছে এমন সব বিষয়েও শুধুমাত্র নিজের মতবাদকেই একমাত্র সঠিক মত বলে গণ্য করা, স্থান কাল ও পাত্র নির্বিশেষে সবাইকে একই সমাধান বাতলে দেওয়া, এক-দেড় হাজার বছর আগের সমাজ কাঠামোর আলোকে বর্তমানকে দেখতে যাওয়া, স্থানীয় প্রেক্ষাপটকে উপেক্ষা করে আরব উপদ্বীপ বা উত্তর ভারতের আচরিত চর্চাকে আরোপ করতে চাওয়া, ঐতিহাসিক ঘটনাবলীকে ইতিহাস হিসেবে না দেখে বিশ্বাসের দৃষ্টিতে দেখা ইত্যাদি নানাবিধ কারণে আমার এমনটা মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আগে বয়স কম ছিল। জীবন ও জগত সম্পর্কে অভিজ্ঞতায় যথেষ্ট কমতি ছিল। জানাশোনায় ঘাটতি ছিল। ফলে অনেকের অনেক কথা সহজেই বিশ্বাস করতে পারতাম। কিন্তু, যাপিত জীবনের জটিল অভিজ্ঞতার কারণে আজ আর তা পারি না। জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে মেলাতে গিয়ে দেখি অনেক বিষয়ই ঠিক মেলে না। ওয়াজের মঞ্চে বা অনলাইনে যত সহজে কোনো একটা কথা বলে দেওয়া হয় বাস্তবে হয়তো তা ততটা সহজ নয়। অতীতে কোনো একটা বিষয় যেভাবে কাজ করত আজ হয়তো তা সেভাবে করে না।
মানুষের মত কখনোই ঐশী প্রত্যাদেশের সমতুল্য নয়। এখানে সীমাবদ্ধতা থাকবেই। অস্বীকার করার বদলে একে স্বীকার করে নেওয়াটাই ভালো। ইসলামের কোন বিষয়টি অপরিবর্তনীয় ও শাশ্বত এবং কোনটি প্রেক্ষাপটের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তনযোগ্য সেই জ্ঞান ও বিবেচনাবোধ ধর্মের বাণী শোনানো সবারই থাকা উচিত।
প্রাসঙ্গিক পডকাস্ট:
প্রাসঙ্গিক লেখা: