ভয় ও আশা সহকারে আল্লাহর ইবাদত করে যেতে হবে
আল্লাহর আযাবের ভয় ও জান্নাতের তামান্না উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ
বুঝে বুঝে বারবার পড়ার উপযোগী করেই কুরআনকে নাযিল করা হয়েছে। যততম বার পড়া হোক না কেন, নতুন কোনো না কোনো দ্যোতনা নিয়ে পাঠকের সামনে তা হাজির হবেই। প্রতিবারেই আল্লাহর অবতীর্ণ করা এই বাণীতে বিশ্বাসীর অন্তর বিগলিত হবেই। আল্লাহ বলেন: للَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُّتَشَابِهًا مَّثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ “আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম বাণী – এমন এক কিতাব যার বিষয়বস্তুসমূহ পরস্পর সুসমঞ্জস, যার বক্তব্যসমূহ বারবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। যাদের অন্তরে তাদের প্রতিপালকের ভয় আছে তারা এর দ্বারা প্রকম্পিত হয়। তারপর তাদের দেহ-মন বিগলিত হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে।” [কুরআন ৩৯:২৩]
ভয় ও আশা সহকারে ঈমানদার ব্যক্তি বারবার কুরআনের দিকে ফিরে আসেন। এই কুরআনই আবার তার ঈমানকে আরও দৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আল্লাহ বলেন: إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ “মুমিন তো তারাই যাদের সামনে আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় ভীত হয়, যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ পড়া হয় তখন তা তাদের ঈমানের উন্নতি সাধন করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে।” [কুরআন ৮:২]
আল্লাহর আযাব ও তাঁর রহমত – এই দুটি বিষয়ের আলোচনা আসেনি কুরআনের এমন একটি পৃষ্ঠা খুঁজে বের করা দুরূহ। বিশ্বাসী হয়ে থাকলে অন্তরে এর প্রভাব পড়বেই। যাদের অন্তরে কুরআনের এই প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়েছে তাদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন: إِنَّمَا يُؤْمِنُ بِآيَاتِنَا الَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا بِهَا خَرُّوا سُجَّدًا وَسَبَّحُوا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا “আমার আয়াতসমূহে তো ঈমান আনে কেবল তারা যারা এর দ্বারা যখন উপদেশপ্রাপ্ত হয় তখন সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং নিজ প্রতিপালকের সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করে। আর তারা অহংকার করে না। (রাতের বেলা) তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং তারা নিজ প্রতিপালককে ভয় ও আশার (মিশ্র অনুভূতির) সাথে ডাকে।” [কুরআন ৩২:১৫-১৬]
আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি নিজের ঈমানকে ভয় ও আশার সমন্বয়ে যিনি এই পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনিই হলেন প্রকৃত বোধবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি। এমনতর ব্যক্তির প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন: أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ ۗ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ “যে ব্যক্তি রাত্রিকালে কখনো সিজদাবস্থায় ও কখনো দাঁড়িয়ে ইবাদত করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং নিজ প্রতিপালকের রহমত প্রত্যাশা করে – সে কি তার সমান যে এরূপ করে না? বলো, যে ব্যক্তি জানে আর যে জানে না তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তাভাবনা কেবল তারাই করে যারা বুদ্ধিমান।” [কুরআন ৩৯:৯]
আল্লাহর আযাবের ভয় মন থেকে উঠে গেলে পাপকে আর খারাপ বলে মনে হয় না। অন্যদিকে, জান্নাতের তামান্না মনের মধ্যে না থাকলে আল্লাহর ইবাদতের ব্যাপারে শৈথিল্য চলে আসে।
ভয় ও আশা পাখির দুটি ডানার মতো। এর কোনো একটিকে ছেটে ফেললে পাখি যেমন আর উড়তে পারে না ঠিক তেমনি আল্লাহর কঠিন আযাবের ভয় এবং তাঁর নয়নপ্রীতিকর পুরস্কারের আশা একইসাথে অন্তরে ধারণ করতে না পারলে কোনো না কোনো বিচ্যুতির মধ্যে পতিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায়।
জাহান্নামের ভয় ও জান্নাতের আশায় নয়, ইবাদত হতে হবে কেবলই আল্লাহকে পাওয়ার জন্য – এমনটি কোনো কোনো মরমী সাধক দাবী করে থাকেন। তাদের এসব কথাবার্তা শুনতে যত আকর্ষণীয় হোক না কেন, আল্লাহর কালাম কুরআনের সাথে তা সরাসরি সাংঘর্ষিক। তাদের এই ভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত না হয়ে জাহান্নামের ভয় ও জান্নাতের আশা সহকারেই মৃত্যু অবধি আল্লাহর ইবাদত করে যেতে হবে।